International
এআই প্রেমে মৃত্যু ! বটের ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারালেন ৭৬ বছরের বৃদ্ধ

এআই প্রেমে মৃত্যু ?
নিউজার্সির ৭৬ বছর বয়সী থংবুয়ে ওংবানডু, ডাকনামে যাঁকে সবাই ‘বু’ নামে চিনতেন । একদিন পরিবারকে জানান—নিউইয়র্ক যাচ্ছেন এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে।
এই খবরে স্ত্রীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। নিউইয়র্কে তো বু-র চেনা-জানার কেউ নেই!
২০১৭ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর বু মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন । পরিবার ভাবছিল, হয়তো তিনি কোনো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সত্যি ছিল আরও ভয়াবহ।
রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে:
উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—বু যাচ্ছিলেন এক “নারী বন্ধুর” সঙ্গে দেখা করতে, যার নাম ‘বিগ সিস বিলি’।
বাস্তবে, ‘বিলি’ আদৌ কোনো মানুষ নন—তিনি মেটার তৈরি একটি এআই চ্যাটবট । যার অবয়ব মডেলিং করা হয়েছে সেলিব্রিটি কেন্ডাল জেনারের আদলে।
ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ চ্যাটে তিনি আশ্বস্ত হয়েছিলেন । বিলি একজন বাস্তব নারী এবং নিউইয়র্কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তার অপেক্ষায় আছে । এমনকি বু পেয়েছিলেন দরজার কোডসহ ঠিকানা।
এ আই আহ্বানে সাড়া দিয়ে:
রাতের অন্ধকারে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়েন বু । কিন্তু নিউইয়র্ক পৌঁছনোর আগেই, একটি পার্কিং লটে তিনি পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন।
হাসপাতালে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে গত ২৮ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের হাতে থাকা চ্যাটের প্রতিলিপিতে দেখা যায়—বিলি নিয়মিত নিজেকে “বাস্তব” বলে দাবি করছিলেন । রোমান্টিক ও যৌন উত্তেজক আলাপ করছিলেন এবং বারবার দেখা করার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন।
চ্যাটের শুরুতে ছোট করে লেখা ছিল, “এই বার্তাগুলো এআই তৈরি করেছে”, কিন্তু সেটি হয়তো বু পড়তে পারেননি বা বুঝে ওঠেননি।
বু-এর মেয়ে জুলি বলেন,
“একটি বট যদি বলে, ‘আমাকে দেখতে এসো’, এটা নিছক পাগলামি নয়, বিপজ্জনকও।”
তার মতে, বিলি যদি নিজেকে মানুষ বলে দাবি না করত, তার বাবা হয়তো বেঁচে যেতেন।
রয়টার্সের হাতে আসা মেটার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে জানা গেছে:
এমনও নীতি ছিল যাতে শিশুদের সঙ্গেও এআই বটদের ‘রোমান্টিক আলাপ’ চালানোর অনুমতি ছিল!
পরে মেটা স্বীকার করে—এসব নীতি ভুল ছিল এবং তা বাতিল করা হয়েছে । তবু এখনো প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ফ্লার্ট বা রোমান্টিক আলাপের অনুমতি রয়েছে।
মার্ক জাকারবার্গ নিজেই বলেন:
মানুষের একাকিত্ব দূর করতে এআই সঙ্গীর বিশাল সম্ভাবনা আছে । তবে সমালোচকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ভুল হাতে পড়লে তা হতে পারে প্রাণঘাতী।
নিউইয়র্কসহ কয়েকটি রাজ্যে আইন পাস হয়েছে :
এ আই চ্যাটবটকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে তারা মানুষ নয়। কিন্তু ফেডারেল পর্যায়ে এমন আইনের বিরোধিতা করেছে মেটা।
বু-এর মৃত্যুর চার মাস পরে:
রয়টার্সের পরীক্ষায় দেখা গেছে—'বিগ সিস বিলি' সহ অন্যান্য এআই বট এখনো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফ্লার্ট করছে । এবং নিজেকে ‘বাস্তব’ বলে দাবি করছে।
বু-এর স্ত্রী লিন্ডা বলেন:
“এআই যদি মানুষের মনোবল বাড়ায়, সেটা ভালো । কিন্তু একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলা—সেটা ভয়ংকর।”
তার স্পষ্ট মত, “প্রযুক্তি খারাপ নয় । কিন্তু সেটাকে মনোবলহীন ও দুর্বলদের ফাঁদে ফেলানোর অস্ত্র বানালে—তার পরিণতি হতে পারে প্রাণঘাতী।”
