Naogaon

মহাদেবপুরে কীটনাশক ব্যবহারে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

Published

on

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য : মহাদেবপুরে কীটনাশক ব্যবহারে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় কৃষিক্ষেতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসল বিষাক্ত হয়ে পড়ছে এবং তা খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, এই বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং জীববৈচিত্র্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের পরিসংখ্যান

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় প্রতিবছর ৭২,১৪০ হেক্টর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করা হয়। এসব কৃষিজমিতে প্রায় ১,৬১,৬৬৫ লিটার কীটনাশক তরল ও ১,৬৯,৭৪৯ কেজি ছত্রাকনাশক পাউডার ব্যবহার করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

কীটনাশকের প্রভাব

১. মানবদেহে নেতিবাচক প্রভাব: কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার, হার্ট ও স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও রয়েছে ঝুঁকি, যা নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এমনকি কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ছে।

  1. জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব: কীটনাশকের ব্যবহার শুধুমাত্র কীটপতঙ্গ নয়, সাপ, ব্যাঙ, মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবনও বিপন্ন করছে। জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
  2. অসচেতনতা ও ঝুঁকি: কৃষকেরা কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেন না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করেন, যা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

কৃষি ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিক্রিয়া

মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশিদুল ইসলাম জানান, কীটনাশক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

অন্যদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, কৃষকদের কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার, ফেরোমোন ফাঁদ ও যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে দ্রুত ফলাফল পাওয়ার আশায় কৃষকরা কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

করণীয়

  • কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব ও প্রাকৃতিক বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়ানো
  • কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম শেখানো
  • ফসল সংগ্রহের আগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ রাখা
  • কীটনাশক ব্যবহারের নীতিমালা শক্তিশালী করা

উপসংহার

মহাদেবপুরসহ সারাদেশে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিকল্প বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

 

আরোও পড়ুন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version