
দিনাজপুরের ৫০ চাষির হাতে কালো সোনার সাফল্য
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০ জন কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। কৃষকদের পরিশ্রমে এই উৎপাদন সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বীজ বিক্রিতে তাদের প্রতি বছরই সিন্ডিকেটের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। ফলে তারা বাধ্য হয়ে কম দামে তাদের উৎপাদিত বীজ বিক্রি করেন।
শুধু বীরগঞ্জেই ৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কাছে জেলায় মোট কত জমিতে বীজ উৎপাদন হয়, তার সঠিক তথ্য নেই। কৃষকেরা দাবি করছেন, সরকার যদি সরাসরি তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতো, তাহলে তারা আরও লাভবান হতে পারতেন।

কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়ছে
পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো বীজ, যা বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। এজন্যই একে “কালো সোনা” বলা হয়। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামে দিন দিন পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়ছে।
এই গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার প্রায় ৫০ জন কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে জড়িত। শহিদুল ইসলাম ও তার ভাই নুরুল ইসলাম তাদের জমিতে বীজ উৎপাদন করছেন এবং তারা সফলভাবে কৃষি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন। এ বছর ৩ একর জমিতে চাষ করে প্রায় ২৮ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ বিক্রির আশা করছেন। খরচ বাদ দিলে তার লাভ হবে প্রায় ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা।

সিন্ডিকেটের কবলে কৃষকেরা
শহিদুল ইসলামের ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা প্রতি বছর সিন্ডিকেটের শিকার হন। ফরিদপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জের পাইকাররা এসে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেন। কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের কাছেই কম দামে বীজ বিক্রি করেন। এরপর সেই পাইকাররা ফরিদপুরে বিএডিসির কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, “বীজ কেনার সময় কম দাম দেওয়া হয়, আর চারা পেঁয়াজ বিক্রির সময় আমাদের বেশি দাম নিতে হয়। এতে কৃষকদের ক্ষতি হয়। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বীজ কিনতো, তাহলে আমরা ন্যায্য দাম পেতাম।”
নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের ফলে স্থানীয় নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বৈরবাড়ী পাঠানপাড়ার নারী শ্রমিক সুমিত্রা রায় বলেন, তারা প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ৪-৫ মাস কাজ পান, যা তাদের জন্য উপার্জনের একটি ভালো সুযোগ।
আরেক শ্রমিক মমতা রানী বলেন, “এলাকায় ৫০ জন কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন, যার ফলে প্রায় ১ হাজার নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন আমাদের এলাকায় বেকার নারী নেই বললেই চলে।”

কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৫১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে বীজ উৎপাদিত হয়েছে ৮ হেক্টর জমিতে।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “বীরগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণ ও মানে অন্যতম। এখানকার কৃষকেরা নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন।”
তবে জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আনিছুজ্জামান জানান, “জেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই। তবে বীরগঞ্জের কৃষকদের সফলতার খবর আমরা শুনেছি। বিষয়টি তদারকি করা হবে এবং কৃষকদের সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
উপসংহার
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক খাত হয়ে উঠেছে। তবে সিন্ডিকেটের কারণে তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগ থাকলে এবং কৃষকদের থেকে সরাসরি বীজ কেনা হলে তারা আরও লাভবান হতেন। একই সঙ্গে স্থানীয় নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ত। কৃষি বিভাগ যদি এই বিষয়ে নজর দেয়, তাহলে দিনাজপুরের কৃষি খাত আরও এগিয়ে যেতে পারবে।
2 thoughts on “দিনাজপুরের ৫০ চাষির হাতে কালো সোনার সাফল্য”