Politics
নির্বাচনের দিন গণভোট নিয়ে বিএনপির পাশে মিত্ররা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
এই প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আপত্তি জানালেও, ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলো বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে সর্বসম্মতি
গত মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও অংশীজনেরা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দেন।
মিত্রদের যুক্তি
বিএনপির মিত্ররা মনে করেন, একই দিনে দুটি ভোট আয়োজন করলে—
একই লজিস্টিকস ব্যবহার করা যাবে,
ব্যয় কমবে,
ভোটারদের একবারই ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে।
তাদের মতে, আগে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিলে ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
এ কারণে তারা নির্বাচনের দিনেই গণভোটের আয়োজনকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ খোঁজার অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি, বাসদ, জাসদ ও জাতীয় গণফ্রন্টসহ বাম ও প্রগতিশীল দলগুলো।
সর্বশেষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক,
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি,
ভাসানী জনশক্তি পার্টির আবু ইউসুফ সেলিম,
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন,
এছাড়া ১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোটের নেতারাও অংশ নেন।
ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, বড় দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সমন্বয় করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দ্রুত সুপারিশ দেওয়া হবে।
তবে গণভোটের প্রশ্ন ও পদ্ধতি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মতবিরোধ ও শঙ্কা
মিত্র দলগুলোর মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ইস্যুতে ভিন্নমত দেখা দিলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ঐক্য ভেঙে যেতে পারে।
তারা সতর্ক করেছেন, এতে “পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি” আবারও রাজনৈতিক সুযোগ নিতে পারে, যা দেশের জন্য অমঙ্গলকর হবে।
এদিকে, অনেকে মনে করেন—একই দিনে দুটি ব্যালটে ভোট হলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারেন। এজন্য মিত্রদের বৈঠকে প্রস্তাব এসেছে গণভোটের প্রশ্ন ও ব্যালট সহজবোধ্য করার।
সাইফুল হকের বক্তব্য
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,
“জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরির চেষ্টা চলছে।
কিছু মতপার্থক্য থাকলেও, বড় দাগে ঐকমত্যের জায়গা ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“যদি রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে যায়, তাহলে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সেই সুযোগ নেবে।
তাই গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর বিভাজন নয়, ঐক্যই এখন সময়ের দাবি।”
পটভূমি
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।
এটি গণভোটে অনুমোদনের জন্য বিএনপি ও এর মিত্ররা কাজ করছে।
তাদের আশা—একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্য ও সময়ের সাশ্রয় দুটোই নিশ্চিত হবে।
video
