🕛 প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪
হামাসের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে অপহৃত হয়েছিলেন শিরি বিবাস ও তাঁর দুই সন্তান। গতকাল বৃহস্পতিবার হামাস মোট চারটি মরদেহ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে হস্তান্তর করে। হামাসের দাবি, ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় তারা নিহত হয়েছে।
তবে মরদেহ পাওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ফেরত পাঠানো দেহগুলোর মধ্যে শিরি বিবাসের মরদেহ নেই।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী শিরি বিবাসের দুই সন্তানের মধ্যে অ্যারিয়েলের বয়স ছিল পাঁচ এবং কেফির মাত্র দুই বছর। তাদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পর ইসরায়েলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মরদেহ বুঝে নেওয়ার পর আইডিএফ বিবাস পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছে, হামাসের হস্তান্তর করা মৃতদেহগুলোর মধ্যে তাদের দুই সন্তানের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তৃতীয় মরদেহটি শিরি বিবাসের নয় বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে হামাসের কাছে শিরি বিবাসের মরদেহ ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি অবশিষ্ট সব বন্দীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি হামাস।
এক্স (সাবেক টুইটার) মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে আইডিএফ জানিয়েছে, ‘পরিচয় শনাক্তক
রণের প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত যে মরদেহটি ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা শিরি বিবাসের নয় এবং কোনো বন্দীর সঙ্গেও এটি মেলেনি। এটি একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ।’
হামাসকে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আইডিএফ আরও বলেছে, ‘হামাস চারজন মৃত বন্দীর দেহ ফেরত দেওয়ার চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। আমরা দাবি জানাই, শিরিকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক এবং আমাদের সব বন্দীকে মুক্ত করা হোক।’
আইডিএফের মতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জিম্মি থাকা অবস্থায় শিরি বিবাসের দুই সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অপহরণের সময় শিরি বিবাসের বয়স ছিল ৩২ বছর। সেই সময় তাঁর ছেলে অ্যারিয়েলের বয়স ছিল চার, আর কেফির মাত্র ৯ মাস। অপহৃত হয়েছিলেন শিশুদের বাবা ৩৪ বছরের ইয়ারডেন বিবাসও। তবে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ইয়ারডেনকে মুক্তি দেয় হামাস।
এদিকে বৃহস্পতিবার ফেরত পাঠানো মরদেহগুলোর মধ্যে চতুর্থ দেহটি ইসরায়েলি শান্তিকর্মী ওদেদ লিফশিৎজের বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় বন্দীদের দেহ হস্তান্তরের ব্যাপারে সম্মতি হয়েছিল। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা আশা করছে মোট ৮টি মরদেহ হস্তান্তর করবে হামাস।
উল্লেখ্য, চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথম ছয় সপ্তাহে ৩৩ জন বন্দীর বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। পরবর্তীতে বন্দীদের মুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শুরু হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় এখনো ৬৬ জন বন্দী আটকে রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আরও তিনজন জিম্মি আছেন, যারা প্রায় এক দশক আগেই অপহৃত হয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে হামাস হামলা চালালে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। সেই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮ হাজার ২৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই সাধারণ ফিলিস্তিনি।