ভিসা স্থগিত, বাণিজ্য ও আকাশসীমা বন্ধ: ভারতের বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের
২২ এপ্রিল ২০২৫ —
পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরকারের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের জবাবে এবার পাল্টা কড়া অবস্থান নিল পাকিস্তান। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা স্থগিত, ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থগিত ঘোষণা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক কঠোর ভাষার বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানায়, এসব পদক্ষেপ ভারতের ‘আক্রমণাত্মক মনোভাবের’ বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গৃহীত হয়েছে।
ভিসা স্থগিত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় প্রদত্ত সকল ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কেও বড় একটি বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আকাশসীমা ও বিমান চলাচল বন্ধ
ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত সব ধরনের বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে দিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপগামী বেশ কিছু রুটে প্রভাব পড়তে পারে।
বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে স্থগিত
পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে তাদের সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে পণ্য চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে পাঞ্জাব অঞ্চলে খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিন্ধু পানি চুক্তি ও যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে বার্তা
বিবৃতিতে পাকিস্তান আরও জানায়, ভারত যদি ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করে কিংবা পানির গতিপথ অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে, তাহলে সেটিকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ইসলামাবাদ সাফ জানিয়ে দিয়েছে—এমন পদক্ষেপের জবাবে “জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে” প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
ওয়াগাহ সীমান্ত বন্ধ
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াগাহ সীমান্ত বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্য ও পর্যটন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের এই কঠোর অবস্থান কেবল প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় ধরনের বার্তা। কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি জটিল হয়ে উঠছে।
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতা জরুরি বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।