
মহাদেবপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় কাজ না করেই অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সরকারি নথিতে প্রকল্পটি শতভাগ সম্পন্ন দেখানো হলেও, বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
কাগজে-কলমে সম্পন্ন, বাস্তবে কিছুই নেই
সরকারি তথ্যানুসারে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় ‘মহাদেবপুর ইউপি কার্যালয় চত্বরে সেবাপ্রার্থীদের জন্য বসার স্থান নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। কাগজে-কলমে প্রকল্পটি সম্পন্ন দেখানো হয়েছে, এবং বরাদ্দের অর্থও মাস্টার রোলের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শকিল ও সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য দিলরুবা খানম মুক্তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের সরাসরি অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, “কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।” তারা দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পুরনো প্রকল্পের নকশা বিকৃতির অভিযোগ
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ধলু জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে তিনি সরকারি অর্থায়নে সেবাপ্রার্থীদের বসার স্থান নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিষদ সেই প্রকল্পের সামান্য পরিবর্তন করে নতুন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। টিনের ছাউনির কিছু অংশ কেটে নতুন কাজের নাম দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অস্পষ্ট বক্তব্য
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা খানম মুক্তা জানিয়েছেন, তিনি কিছু কাগজে স্বাক্ষর করেছেন, তবে প্রকল্পের ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন না। ইউপি সচিব গোলাম রাব্বানী মল্লিক বিষয়টি অস্বীকার করলেও প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

চেয়ারম্যানের অজুহাত
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শকিল বলেন, “আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে একটি সেড নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সড়ক ও জনপদ বিভাগ জমি অধিগ্রহণ করবে কিনা তা নিশ্চিত না হওয়ায় কাজটি আটকে আছে।” তবে ভুয়া মাস্টার রোল দাখিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান সোহাগ জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (উপসচিব) সালাহ্উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেষ কথা
মহাদেবপুরে সরকারি প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এবারের অভিযোগ সরাসরি ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে হওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুতর। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতি পুনরাবৃত্তি না ঘটে।