মাগুরার শিশুকে হারানোর বেদনা — সাক্ষ্যগ্রহণে কাঁদল আদালত
মাগুরা:
কিছু ক্ষত কখনোই শুকায় না। আট বছরের সেই নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যুর পরে মাগুরা আজও কাঁদছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল), সেই বেদনাদায়ক ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো — প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
আদালতের নিরব পরিবেশ ভেঙে কান্না জড়ানো কণ্ঠে দাঁড়ান শিশুটির মা। তাঁর পাশে দাঁড়ান প্রতিবেশী জলি খাতুন এবং শিশুটিকে বহনকারী ভ্যানচালক রুবেল হোসেন।
তিনজনই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আদালতে নিজেদের কথা বললেন — সত্যের পক্ষে।
ন্যায়বিচারের পথে প্রথম কদম
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান,
“আজ তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারক মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন সাক্ষীদের বক্তব্য ও আসামিপক্ষের জেরা। আগামীকাল আরও তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।“
এর আগে ২৩ এপ্রিল, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে এতদিন আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
এদিন মাগুরা লিগ্যাল এইডের সহায়তায় আইনজীবী সোহেল আহম্মেদ আসামিপক্ষে নিয়োগ পান। তিনি সাক্ষীদের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু নিথর সত্যের সামনে কোনো প্রশ্নই যেন ফিকে হয়ে যায়।
নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে শিশুটির মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললেন,
“আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। আমি চাই, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।“
নিষ্পাপ প্রাণের আর্তনাদ
গত ৬ মার্চ, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রাম থেকে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি।
কিন্তু ওই সফরই তার জীবনের শেষ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়।
দুষ্কৃতকারীরা তাকে ধর্ষণ করে, নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালায়।
অচেতন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে।
পরের সাত দিন ধরে চলে বেঁচে থাকার লড়াই।
শেষ পর্যন্ত ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিভে যায় তার ছোট্ট প্রাণ।
হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় ফিরে আসে শিশুটির নিথর দেহ।
নোমানী ময়দানে প্রথম জানাজা আর সব্দালপুরের মাঠে দ্বিতীয় জানাজার সাক্ষী হয় হাজার হাজার শোকাহত মানুষ।
শেষমেশ সোনাইকুন্ডীর মাটিতে চিরনিদ্রায় শুয়ে পড়ে নিষ্পাপ সেই আত্মা।
ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষা
শিশুটির মৃত্যুর পর উত্তেজিত জনতা শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
মায়ের দায়ের করা মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
আজ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আবারও মনে পড়ে যায় সেই প্রশ্ন—
একটি নিষ্পাপ প্রাণের জন্য কি সত্যিই আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবো?
মাগুরার আকাশে এখনো যেন গুমোট বাতাস।
আর শিশুটির মায়ের ডুকরে কেঁদে ওঠা আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে —
“আমার মেয়ের মতো আর কোনো মা যেন সন্তান হারানোর যন্ত্রণা না পায়…“