রাজনৈতিক সমঝোতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ: নির্বাচনের সম্ভাবনা ও দারিদ্র্যের আশঙ্কা
২২ এপ্রিল ২০২৫ –
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে যখন আলোচনার তুঙ্গে, তখন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়েও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নমনীয় অবস্থান নিলেও, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে তুলে ধরেছে এক হতাশাজনক চিত্র।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলেও আপত্তি নেই বিএনপির
দেশ রূপান্তরের খবরে বলা হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। তবে সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়, তাহলে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে দলটি। বিএনপি মনে করে, নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই কমবে এবং দলগুলো নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি নিতে পারবে।
এ লক্ষ্যে দলটি ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করছে। সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচনের রোডম্যাপ ও রাজনৈতিক সংস্কার। মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেন, সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট নয়, ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এতে বিএনপি স্বীকার করে যে, কেবল নির্বাচন নয়, সংস্কার নিয়েও তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
বৈঠকে দুর্নীতি, দলীয় শৃঙ্খলা এবং নেতাদের আচরণ নিয়েও আলোচনা হয়। গণতন্ত্র মঞ্চ এ বিষয়ে জনগণের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়ার পরামর্শ দেয়। বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গেছে বলেও মনে করে মঞ্চের নেতারা।
তবে বিএনপি একাধিক দলের সঙ্গে আলোচনায় একমত হয়েছে যে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনই একমাত্র পথ। এই লক্ষ্যে দলটি আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও ঐক্য গড়ে তুলতে চায়।
৩৬ বছরে সর্বনিম্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস: ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যে পড়বে
এদিকে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে—যা গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ৪.১ শতাংশ হবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু বিনিয়োগের ঘাটতি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে সেই পূর্বাভাসে বড় ধাক্কা এসেছে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, আর্থিক এই মন্দা শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, এর বাস্তব প্রভাব পড়বে লাখ লাখ মানুষের জীবনে। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আগামী এক বছরে দারিদ্র্যের কবলে পড়বে—যাদের দৈনিক আয় ২.১৫ ডলারের নিচে থাকবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেই চার শতাংশ কর্মসংস্থান হারিয়ে গেছে, আর কম দক্ষ শ্রমিকদের আয় দুই শতাংশ কমেছে। এতে দারিদ্র্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বৈষম্যও বাড়বে। এমনকি তিনটির মধ্যে দুটি পরিবার তাদের সঞ্চয় খরচ করছে শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতিই বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা। সংকট মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরও কার্যকর করতে হবে। তবে রিপোর্টে আশার বাণীও রয়েছে—নতুন অর্থবছরের কিছু সময় থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হতে পারে।
সারসংক্ষেপে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে বিএনপির নমনীয় অবস্থান রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত দিলেও, বিশ্বব্যাংকের সতর্ক বার্তা দেশের অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তার জন্ম দিয়েছে। সময়মতো নির্বাচন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার—এই দুইটি ইস্যুই এখন বাংলাদেশের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।