অর্থনীতি: ২০২৫ সালেও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা ক্ষীণ
বিশ্বব্যাংক ও দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসছে না। চলতি বছর আরও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অতি দারিদ্র্যের হার ৯.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। দুর্বল শ্রমবাজার, অব্যাহত মূল্যস্ফীতি, এবং মজুরি স্থবিরতার কারণে গরিব মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে, ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পরিবার যদি মাত্র এক সপ্তাহ কাজ না পায়, তাহলেই তারা দরিদ্র শ্রেণিতে নেমে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে মজুরি না বাড়ায় প্রকৃত আয়ের ঘাটতি আরও প্রকট হচ্ছে।
সংকটের কারণ: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্বল রাজস্ব
গবেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কম বিনিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি, এবং রাজস্ব ঘাটতি এই সংকটকে আরও গভীর করছে।
সমাধানে তারা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আঞ্চলিক উত্তেজনা: ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তপ্ত
কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারত অভিযোগ করছে, হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। এর পরই ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয়দের ভিসা বাতিল, আকাশসীমা বন্ধ, এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত করে।
পাকিস্তান সরকার হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, পানি প্রবাহ বন্ধ করার যে কোনও পদক্ষেপকে “যুদ্ধের ঘোষণা” হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘টিআরএফ’ নামের একটি গোষ্ঠী, যাদের ভারত লস্কর-ই-তাইয়েবা-র অংশ বলে দাবি করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “হামলাকারীরা কঠোর শাস্তি পাবে।” ইতোমধ্যে কাশ্মীরে সেনা অভিযান শুরু হয়েছে, যেখানে একজন ভারতীয় সেনা নিহত হন।
দুই দেশই পরস্পরের কূটনীতিকদের সংখ্যা হ্রাস করেছে এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সার্ক ভিসা বাতিল, সীমান্ত ও আকাশসীমা বন্ধ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ২০১৯ সালের পর সর্বোচ্চ উত্তেজনায় পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি: সহিংসতা ও ভাঙনের মধ্যে বাংলাদেশ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৩৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬ জনই বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার।
শুধুমাত্র মার্চ মাসেই ২০ জন নিহত ও ৬৪২ জন আহত হয়েছেন। বিরোধপূর্ণ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টোল আদায়, জমি দখল ইত্যাদি কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল পর্যায়ে উত্তেজনা বেড়ে গেছে, যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তারা দাবি করছেন, সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক চর্চার অনুপস্থিতি, আদর্শহীনতা, রাজনীতির অপরাধীকরণ ও দুর্নীতির কারণে এমন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই নতুন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে, যারা বর্তমানে সংঘর্ষে সক্রিয়।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতি থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা ছাড়া সহিংসতা বন্ধ হবে না। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই এই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান হতে পারে।