প্রভাবশালীর মামলায় জর্জরিত গ্রামবাসী | নওগাঁয় সরকারি জলাশয় বেদখল

ngn news

প্রভাবশালীর মামলায় জর্জরিত গ্রামবাসী

জেলা প্রতিনিধি : কামরুল হাসান ,নওগাঁ।

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কুঁজাগাড়ী এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি জলাশয় (ডহর) দীর্ঘ বছর যাবত অবৈধভাবে দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে অত্র গ্রামের ঘর জামাই রহিম মোল্ল্যা নামে এক প্রভাবশালী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। বিয়ের সুবাদে রহিম মোল্ল্যা ওই গ্রামে শশুরের অধিক পরিমাণ সম্পত্তি তার স্ত্রীর নামে পেয়ে থাকে। শ্বশুরের মৃত্যুর পর থেকেই তিনি নিজ গ্রাম মান্দা ছেড়ে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী কুজাগাড়ীতে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘর জামাই হিসেবে থেকে যায়। কিন্তু তার নামে কোনো সম্পত্তি নাই সব সম্পত্তি তার স্ত্রীর নামে লিখা রয়েছে। তবুও তিনি আদালতে তার সম্পত্তি তুলে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে বারবার মামলা করেন। পরিবর্তিত দেশের প্রেক্ষাপটের পর জলাশয়টি দখলমুক্ত করায় ওই গ্রামেরই ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন পৃথক ২টি মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মামলায় জর্জরিত ভুক্তভোগীরা হলেন, সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কুঁজাগাড়ী গ্রামের মৃত ছবের আলীর ছেলে আবু সাঈদ (৩২), ইয়াকুব আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম (৪০), মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে রোস্তম মন্ডল (৩৫), মৃত আহসান মন্ডলের ছেলে জনাব আলী (৫০), মৃত ভিটি মন্ডলের ছেলে আমান মন্ডল (৪০), অলির ছেলে দুলাল (৩৫), মৃত ছবের মন্ডলের ছেলে সোহরাব (৫৫)।

Ngn News
সম্প্রতি সরেজমিন ওই গ্রামে গেলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কুঁজাগাড়ী বিল উন্মুক্ত জলাশয় হওয়ায় সেখানে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় সরকারি জলাশয় (ডহর) রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব ডহর স্থানীয় গ্রামবাসীদের উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা। তবে সেখানকার একটি ডহর বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগীতায় অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন প্রভাবশালী ঘর জামাই রহিম মোল্ল্যা ও তার ছেলে বুলবুল হাসান। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডহরটি দখলমুক্ত করে নেয় গ্রামবাসীরা। এবং গ্রামের কৃষকদের মাঠে চলাচলের উন্নয়নে সেই ডহরটিতে কাঁচা রাস্তা তৈরি করেছে অত্র গ্রামবাসী। এরপর থেকেই ডহরটি আবারো ফিরে পেতে নানান ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন রহিম মোল্ল্যা ও তার ছেলে। ডহরটির পাশে তাদের ৭ বিঘা জমি রয়েছে চলতি মৌসুমে ইরি ধান রোপনের সময় চললেও রহিম মোল্যা তাদের ৭ বিঘা জমিতে ধান না লাগিয়ে ইচ্ছে করে জমি ফেলে রেখেছে। কারন তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ধান রোপণে বাঁধা, জমিতে ডিপের পানি দিতে বাঁধা এরকম একটি অভিযোগ তুলে আদালতে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তিনি। কিন্তু দেখা গেছে তার জমিতে গ্রামবাসীরা ডিপের সেচের পানি দিয়ে রেখেছে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী মিথ্যে মারপিট ও জখমের মামলা এবং ২১ জানুয়ারি হুমকি-ধামকির মিথ্যে মামলা গ্রামের ৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে পুরো গ্রামে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যেকোনো মুহুর্তে হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। তাই এ সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্টদের আইনী সহযোগীতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।
কুঁজাগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আবু সাঈদ ও জনাব আলী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠ ছিলো রহিম মোল্ল্যা ও তার ছেলে বুলবুল হাসান। গ্রামে পেশিশক্তি খাটিয়ে সরকারি জলাশয় (ডহর) থেকে শুরু করে অন্যের ব্যক্তিমালিকানা জমি অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া তাদের স্বভাব। দীর্ঘ বছর যে ডহর গ্রামবাসীর উন্নয়নে ব্যবহার হওয়ার কথা, সেটি লুটপাত করে খেয়েছে ওরা। আমরা আর ওই ডহর তাদের হাতে ফেরত যেতে দেবো না।

একই গ্রামের বাসিন্দা আরেক ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীকে এর আগেও তারা বিভিন্ন সময়ে মিথ্যে মামলা দিয়ে ফাঁদে ফেলে নগদ অর্থ আদায় এবং জমি লুট করতো। এটা তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। আমরা নিরপরাধ। অথচ দুইটি মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই ভূমি দস্যুদের দস্যুতা তদন্ত করে ন্যায় বিচার করবেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম মোল্ল্যা বলেন, আমরা কোনো মিথ্যে মামলা করিনি। আমার ছেলেকে ওরা পিটিয়ে আহত করেছিলো। তার উপযুক্ত প্রমাণসহ মামলা করেছি। ডহরটি অবৈধভাবে ওরাই দখল করেছে। এখনো নিজের জীবনের শঙ্কায় রয়েছি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সরকারি ডহর নিয়ে কুজাগাড়ী গ্রামে সমস্যা হওয়ার বিষয়টি জানা ছিলো না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।

see more…

NGN News

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial