
মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা: লালমনিরহাটে হৃদয়বিদারক ঘটনা
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ৯ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকাকে শোকে আচ্ছন্ন করে তুলেছে।
শিশু শাকিলের মর্মান্তিক পরিণতি
গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার গোকুণ্ডা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরটারী গ্রামে একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে শাকিল নামের শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শাকিল তার নানির সঙ্গে লালমনিরহাটে থাকতো এবং পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিল। তার বাবা শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রামে কর্মরত এবং তার মা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

অপহরণ ও মুক্তিপণের দাবি
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১০ মার্চ) সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল শাকিল। রাতে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শাকিলের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি লালমনিরহাট সদর থানায় জানালে পুলিশ প্রযুক্তিগত সহায়তায় ফোন নম্বরটি ট্র্যাক করে। এতে অভিযুক্ত সোহান (১৮), তার বাবা ও মাকে আটক করা হয়।
অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও মরদেহ উদ্ধার
পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর সোহান শাকিলকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ, ডিবি ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সোহানের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশের বক্তব্য
লালমনিরহাট সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুল হক বলেন, “তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তিনজনকে আটকের পর তাদের রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এবং দ্রুতই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে। প্রত্যেক শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।