কেমন ছিল বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফেরার যাত্রা?
নাসার দুই মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস আট দিনের মিশনে মহাকাশে গিয়েছিলেন, কিন্তু কাটাতে হলো দীর্ঘ নয় মাস। প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে এই অভিযানের মেয়াদ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। অবশেষে তারা পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন সফলভাবে।
অবতরণের চমকপ্রদ মুহূর্ত
তাদের স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে প্রবল গতিতে প্রবেশ করে এবং চারটি প্যারাসুট খোলার পর এটি ফ্লোরিডার উপকূলে মৃদুভাবে পানিতে স্প্ল্যাশডাউন করে। অবতরণের পর যানটিকে ঘিরে ধরে এক ঝাঁক ডলফিন, যা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে।
একটি উদ্ধারকারী দল দ্রুত যানটিকে পানি থেকে তুলে আনে। তাদের সহকর্মী নিক হেগ এবং আলেকজান্ডার গরবানভ যখন যানটির হ্যাচ খোলেন, তখন সুনিতা ও বুচকে বেশ খোশমেজাজে দেখা যায়।
প্রযুক্তিগত সমস্যা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষা
২০২৪ সালের জুন মাসে ‘বোয়িং’ নির্মিত স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্টের প্রথম মনুষ্যবাহী টেস্ট ফ্লাইটের অংশ হিসেবে মহাকাশে যান এই দুই নভোচারী। কিন্তু মহাকাশে যাওয়ার পরপরই প্রযুক্তিগত ত্রুটির সম্মুখীন হয় তাদের যান।
যানটিকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা করা হয়। অবশেষে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্পেসএক্সের মাধ্যমে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর প্রভাব
মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে কাটানো সময় তাদের হাড় ও পেশীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, দৃষ্টিশক্তি প্রভাবিত হতে পারে এবং রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন আসতে পারে।
ফিরে আসার পর, তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নজরদারি করতে একটি বিশেষ মেডিক্যাল দল কাজ করছে। তাদের শরীরের অবস্থা স্বাভাবিক করতে নির্দিষ্ট শারীরিক ব্যায়ামের অনুশীলন করতে হবে।
নতুন রেকর্ড স্থাপন
এই অভিযানে সুনিতা উইলিয়ামস ইতিহাস গড়েছেন, কারণ তিনিই প্রথম নারী মহাকাশচারী যিনি স্পেস স্টেশনের বাইরে সর্বোচ্চ সময় কাটিয়েছেন।
ফেরার অনুভূতি
নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার পরপরই টেক্সাসের হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তারা তাদের পরিবার ও পোষা প্রাণীদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবেন।
এক সাক্ষাৎকারে সুনিতা উইলিয়ামস বলেন, “আমার পরিবার ও পোষা কুকুরদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি অপেক্ষায় আছি। সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার অনুভূতি অসাধারণ হবে।”
বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের এই মহাকাশ অভিযান আমাদের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের বার্তা দেয়, যেখানে মানুষ দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটিয়ে নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হচ্ছে।