উপদেষ্টার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল: সরল বিশ্বাস নাকি প্রভাবের অপব্যবহার?
২৫ এপ্রিল —
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ঘটনাটি সামনে আসার পর সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেছেন, তার বাবা সরল বিশ্বাসে লাইসেন্স গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, স্থানীয় এক ঠিকাদার নিজস্ব সুবিধার জন্য তার বাবাকে এই লাইসেন্সের জন্য রাজি করান। ওই ঠিকাদারই পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন, আর তার বাবা কেবল স্বাক্ষর ও তথ্য দিয়েছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, “আব্বু তো কোনো ঠিকাদারি ব্যবসা করবেন না, আর সেই সামর্থ্যও তার নেই। ওই ঠিকাদারই তার নামে লাইসেন্স করে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন।”
সামাজিক মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ ও ব্যাখ্যা
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি লেখেন, “বাবা হয়তো ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাই তার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।”
তিনি দাবি করেন, এই লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।
প্রশ্ন উঠছে—বিষয়টি আলোচনায় না এলে কী ঘটত?
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপদেষ্টার নেয়া পদক্ষেপটি ইতিবাচক। তবে আলোচনা না হলে হয়তো এই স্বার্থের দ্বন্দ্বও আড়ালেই থেকে যেত।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ক্ষমতাধরদের আত্মীয়-স্বজনকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার মানসিকতা আমাদের প্রশাসনের মধ্যেই গেঁথে গেছে। এই সংস্কৃতি ভাঙা জরুরি।”
এপিএস ইস্যুতেও বিতর্ক
এর আগে আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। পরে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তবে উপদেষ্টা দাবি করেন, এপিএসের অব্যাহতির সঙ্গে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ জড়িত নয়। তিনি বলেন, “মোয়াজ্জেম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আগেই পদত্যাগের আবেদন করেছিল, সেটিই অনুমোদন করা হয়েছে।”
সিস্টেম পরিবর্তনের ডাক
টিআইবি’র মতে, রাজনৈতিক সংস্কার ও সুশাসনের জন্য ক্ষমতার সদ্ব্যবহার অপরিহার্য। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যদি আইন বহির্ভূত আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে রাজনীতি ও শাসন কাঠামোর সংস্কার কার্যকর হবে না।”
এনজিএন নিউজ