কুড়িগ্রামে নাশকতা রুখতে বিশেষ অভিযান: আওয়ামী লীগের ৩১ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
কুড়িগ্রামে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ ‘নাশকতাবিরোধী’ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মোট ৩১ জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পেছনের কারণ
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা বিভিন্ন জায়গায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন। পুলিশ সন্দেহ করছে, তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যা আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারত। এসব তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং সংশ্লিষ্ট থানাগুলো সমন্বিতভাবে এই বিশেষ অভিযান চালায়।
কোন থানা থেকে কতজন গ্রেপ্তার
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে মোট ১১টি থানা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছে—
-
সদর থানা: ৭ জন
-
রাজারহাট: ২ জন
-
উলিপুর: ৩ জন
-
নাগেশ্বরী: ১ জন
-
ফুলবাড়ী: ৪ জন
-
ভুরুঙ্গামারী: ৫ জন
-
চিলমারী: ২ জন
-
রাজিবপুর: ২ জন
-
রৌমারী: ১ জন
-
কচাকাটা: ২ জন
-
ঢুষমারা: ২ জন
পুলিশের বক্তব্য
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা ও ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “জেলায় নাশকতা পরিকল্পনায় জড়িত ও সহযোগী হিসেবে চিহ্নিতদের ধরতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। এই অভিযান শুধু শুরু, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছি। কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এই গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ এবং ‘রাজনৈতিক হয়রানি’ বলে দাবি করেছেন। তাদের ভাষ্য, “আওয়ামী লীগের কর্মীরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কোনো ষড়যন্ত্র বা নাশকতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
তবে পুলিশ বলছে, আইন ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, প্রয়োজনে আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি
এই ঘটনার পর জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেলায় অতিরিক্ত নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।