Connect with us

আন্তর্জাতিক বাংলা

গঙ্গায় নিঃশব্দ মৃত্যু! বিপন্ন ৬ হাজার ডলফিন

Published

on

গঙ্গায় নিঃশব্দ মৃত্যু! বিপন্ন ৬ হাজার ডলফিন

ভারতের ঐতিহাসিক ও পবিত্র নদী গঙ্গা, একসময় যাদের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল, সেই নদীই আজ ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলছে প্রায় ৬ হাজার গাঙ্গেয় ডলফিন। একসময় গঙ্গার জলে খেলা করত হাজার হাজার ডলফিন—আজ তাদের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে।

গাঙ্গেয় ডলফিন, ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীব্যবস্থায় বাস করে। এই ডলফিন এক বিশেষ প্রজাতি, যারা সামুদ্রিক ডলফিনের মতো পানিতে লাফিয়ে চলাফেরা করে না। তারা দৃষ্টি হারিয়ে নদীর তলদেশে সাঁতার কাটে, আর পথ খোঁজে প্রতিধ্বনির মাধ্যমে।

সাম্প্রতিক এক সরকারি জরিপে জানা গেছে,

ভারতে নদীতে বসবাসকারী ডলফিনের সংখ্যা ৬ হাজার ৩২৭। এর মধ্যে গাঙ্গেয় ডলফিনের সংখ্যা ৬ হাজার ৩২৪, বাকি তিনটি সিন্ধু ডলফিন। সিন্ধু ডলফিন, যাদের প্রধান বাসস্থান পাকিস্তান, মাঝে মাঝে ভারতে চলে আসে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এই দুই প্রজাতিকে ‘বিপন্ন প্রাণী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের ১০টি রাজ্যের ৫৮টি নদীতে পরিচালিত জরিপে ভয়াবহ একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাঙ্গেয় ডলফিন, যা একসময় সামুদ্রিক ডলফিনের বিবর্তিত রূপ ছিল, নদীর ভাঁটার কারণে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

ডলফিনের প্রজনন হারও অত্যন্ত কম। স্ত্রী ডলফিন ৬ থেকে ১০ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং প্রতি ২ থেকে ৩ বছর পর একটি করে বাচ্চা জন্ম দেয়।

১৯৮০ সাল থেকে ৫০০-এর বেশি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।

অধিকাংশই মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে, আর অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়। ডলফিনের মাংস এবং তেল ব্যবহার করা হয় মাছ ধরার টোপ হিসেবে।

আরেক ভয়াবহ বিষয় হলো—অনেক জেলে আইনগত জটিলতা এড়াতে ডলফিন হত্যার ঘটনা গোপন রাখেন। ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ডলফিন হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে।

এছাড়া ক্রুজ পর্যটনও গাঙ্গেয় ডলফিনদের জন্য একটি নতুন বিপদ। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে বিলাসবহুল জাহাজ চলাচল করছে, যা সংরক্ষণবাদীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

পরিবেশবিদ রবীন্দ্র কুমার সিনহা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-

এ বলেন, “ডলফিন শব্দের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ক্রুজের সংখ্যা বাড়লে, গাঙ্গেয় ডলফিনের অবস্থা আরও খারাপ হবে, যেমনটা চীনের ইয়াংজি নদীতে বাইজি ডলফিনের ক্ষেত্রে হয়েছিল।”

Advertisement

এই ডলফিনেরা চোখে দেখতে না পেয়ে, ধীর গতিতে সাঁতার কাটে এবং শব্দের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা নেয়। ফলে, তারা প্রায়ই নৌকা বা বড় জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে।

তবে, আশার সঞ্চারও আছে। ২০০৯ সালে ভারত সরকার গাঙ্গেয় ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০২০ সালে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং ২০২৪ সালে ডলফিন সংরক্ষণে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

রবীন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, “হ্যাঁ, আমরা কিছুটা অগ্রগতি করেছি, তবে এখনও অনেক কিছু বাকি। আমাদের হাতে সময় খুব কম।”

SEE MORE>>

Continue Reading
Advertisement
3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2017 Zox News Theme. Theme by MVP Themes, powered by WordPress.