ভালোবাসার ঘরে নিভে গেল হাসির প্রাণ — স্বামীর পরকীয়ায় প্রাণ গেল গৃহবধূর
এক সময়ের হাসিমুখ এখন নিথর। একটি ছোট্ট সন্তানের মা, হাসি খাতুন (২৩) — আজ কেবলই একটি নাম, একটি হারানো গল্প।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নিজের স্বামীর ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে হলো তাঁকে, অভিযোগ উঠেছে, ভালোবাসার নামে নির্মম প্রতারণার।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরের সূর্য তখন মধ্য গগনে। উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের সড়াতৈল সরকারপাড়া মহল্লায় স্বামীর বাড়ি থেকে হাসির নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
চারদিকে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা নির্বাক। যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে চারপাশের বাতাসও।
প্রেমের প্রতিশ্রুতি থেকে বিষের পরিণতি
তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল হাসির। স্বপ্ন ছিল ছোট্ট সংসারে সুখের ছবি আঁকার। তাদের ঘর আলো করে এসেছিল একটি ছেলে সন্তানও।
কিন্তু স্বপ্নের সেই ছবিতে ধীরে ধীরে আঁধার নেমে আসে। হাসির স্বামী জাকারিয়া হোসেন গড়ে তোলেন অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক।
ঘরে প্রতিদিন শুরু হয় ঝগড়া, বিষাক্ত কলহ। হাসি বাঁধা দিয়েছিলেন। লড়াই করেছিলেন নিজের অধিকার, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য।
কিন্তু সেই প্রতিবাদই হয়তো হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর কারণ।
নিহতের বোন খুশি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“প্রথমে আমাদের বলা হয়, হাসি স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু এসে দেখি, তার গলায় আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন। আমরা তখনই পুলিশকে খবর দিই।“
আইন অপেক্ষায়, ন্যায়বিচার অনিশ্চিত
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী জানান,
“মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।“
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী জাকারিয়া হোসেন পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
একটি প্রশ্ন, একটি আহ্বান
একটি তাজা প্রাণের এমন করুণ পরিণতির দায়ভার কে নেবে?
ছোট্ট শিশুটি যখন মায়ের জন্য কাঁদবে, তখন কে দেবে জবাব?
হাসি খাতুনের মৃত্যুর দায় শুধুই কি একজন মানুষের? নাকি আমাদের সমাজেরও?
আজ হয়তো হাসির নিঃশব্দ মৃত্যু একটি ক্ষণিকের সংবাদ হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রতিটি হৃদয়ে বাজবে সেই প্রশ্ন — ভালোবাসার নামে প্রতারণা আর সহিংসতার এই বৃত্ত ভাঙবে কবে?