ঢাকা বিভাগ
সংঘর্ষ থামাতে প্রশাসনের কঠোর বার্তা: এবার ভিন্ন অবস্থানে কলেজ ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ

সংঘর্ষ থামাতে প্রশাসনের কঠোর বার্তা: এবার ভিন্ন অবস্থানে কলেজ ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকায় কলেজ শিক্ষার্থীদের লাগাতার সংঘর্ষে অতিষ্ঠ জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীরা। দিনের পর দিন চলমান এই সংঘর্ষের কারণে শুধু জনজীবন ব্যাহতই হচ্ছে না, বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষাজীবনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ করেই রাস্তায় শুরু হওয়া ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ আর আতঙ্কজনক পরিস্থিতি যেন রাজধানীর এই অঞ্চলগুলোতে নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ১৫ ও ২২ এপ্রিলের সংঘর্ষ আবারও আলোচনায় আনতে বাধ্য করেছে কলেজ শিক্ষার্থীদের সহিংসতা। বিশেষ করে গত ২২ এপ্রিলের সংঘর্ষে ২০ জনের বেশি আহত হন— যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, এমনকি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের ঘটনাও ঘটে। এত কিছুর পরও সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ স্পষ্ট না হওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘শিক্ষার্থীরা এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না’— এমন মন্তব্য এখন শুধু হতাশা নয়, বরং বাস্তবতা প্রতিফলনের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৬ মাসে তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা ১২০টি সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ছোটখাটো ঝামেলা যেমন হেঁটে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগা, ফেসবুক স্ট্যাটাস কিংবা চোখে চোখ পড়া— এসবই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
এ অবস্থায় অবশেষে পুলিশ প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কড়া অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল ধানমন্ডি মডেল থানায় আয়োজিত এক জরুরি বৈঠকে তিন কলেজের অধ্যক্ষ এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়:
-
উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের তালিকা পুলিশের কাছে দেওয়া হবে
-
অভিভাবকদের থানায় ডেকে এনে সতর্ক করা হবে
-
সতর্ক না হলে আইনি ব্যবস্থা ও কলেজ থেকে টিসি
-
টিসি পাওয়া শিক্ষার্থীকে অন্য কলেজে ভর্তি নিষিদ্ধের নীতিমালা প্রণয়ন
-
কলেজ ও পুলিশের যৌথ মনিটরিং টিম গঠন এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তথ্য আদান-প্রদান
অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সংঘর্ষমুক্ত রাখতে কলেজ পর্যায়েও কড়া নজরদারি চালানো হবে। ছাত্রদের মধ্যে যারা বারবার ঝামেলায় জড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে এবার আর কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বারবার বলছেন— কিছু উগ্রপন্থী শিক্ষার্থীর জন্য পুরো ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তারা চায় নিরাপদ শিক্ষাজীবন ও ক্লাসে মনোযোগী হতে। ব্যবসায়ীরাও দাবি করছেন— প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ যেন কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেরি না করে।
অতএব, এখন সময় এসেছে— কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে এই শিক্ষাঙ্গনের সংঘর্ষের সংস্কৃতি বন্ধ করা। না হলে, আগামী দিনের রাজধানী আরও বেশি অশান্ত ও বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠবে— এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
শেষ কথা: ছাত্ররা শিক্ষার্থী হয়ে উঠুক, রাস্তায় ‘যোদ্ধা’ নয়।
অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসন— সবাইকে একসঙ্গে এই বার্তা দেওয়া দরকার।
