Connect with us

ঢাকা বিভাগ

১১ বছরেও বিচার হয়নি: নারায়ণগঞ্জ ৭ খুনের ফাঁসির দাবিতে স্বজনদের কান্না-ভেজা মানববন্ধন

Published

on

১১ বছরেও বিচার হয়নি

নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন: ১১ বছরেও ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি, বিচারের দাবিতে স্বজনদের কান্না-ভেজা মানববন্ধন

১১ বছরেও বিচার হয়নি

 

নারায়ণগঞ্জ, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ — নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুনের ১১ বছর পার হলেও এখনও কার্যকর হয়নি ফাঁসির আদেশ। এই দীর্ঘ অপেক্ষা ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে এক হৃদয়বিদারক মানববন্ধনে তারা দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান।

সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জড়ো হন নিহতদের পরিবার, স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। হাতে পোস্টার ও কালো ব্যানার, চোখে জল—প্রত্যেকের মুখে ছিল একটাই দাবি: “আমরা ন্যায়বিচার চাই, এখনই চাই!”

সেলিনা ইসলাম বিউটির আকুতি: “আমরা সাতটি পরিবার কর্তা হারা হয়েছি”

মানববন্ধনে নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,

“১১ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হয়নি। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা আমাদের কথাও ভাবুক। সাতটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরা অন্তত চোখের সামনে বিচারটা শেষ হতে দেখতে চাই।”

“আমার মেয়ে এখন ১১ বছরের, বাবার বিচার এখনো হয়নি”

১১ বছরেও বিচার হয়নি

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন নাহার নুপুর বলেন,

“যখন আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়, তখন আমি গর্ভবতী ছিলাম। আজ আমার মেয়ের বয়স ১১ বছর। সে এখনো জানে না, তার বাবার হত্যার বিচার হয়নি। আমরা অসহায়, আমরা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই।”

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে শোক, ক্ষোভ ও প্রত্যাশা

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মো. শিহাব উদ্দিন, নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আব্দুস সালাম, নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের, মো. মিজানুর রহমান, আহসানুল্লাহ মাস্টার, জামাল উদ্দিন, মো. হারুনুর রশিদ ও মো. নাসির উদ্দিনসহ ২নং ওয়ার্ডের শতাধিক বাসিন্দা।

তারা বলেন, “এটা শুধুই ৭টি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি রাষ্ট্রের কাছে আমাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা চাওয়ার লড়াই।”


পটভূমি: নারায়ণগঞ্জের গুম-হত্যার ভয়াল ইতিহাস

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার তিন সহযোগী, গাড়িচালক এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালকসহ মোট ৭ জনকে গুম করা হয়। তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে একের পর এক লাশ। এ দৃশ্য সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দনের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি হত্যা মামলা করেন।

আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

Advertisement

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও এম এম রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।

পরে ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালত এই রায় বহাল রাখেন—নূর হোসেন ও র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

তবুও আজও রায় কার্যকর হয়নি…

বিচার কার্যক্রম এতদূর এগোলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় এখনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। মামলাটি উচ্চ আদালতে বছরের পর বছর ঝুলে আছে। ফলে নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত বোধ করছে।


স্বজনদের প্রশ্ন: “আর কতকাল অপেক্ষা করব?”

মানববন্ধনের মাধ্যমে নিহতদের পরিবার রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান, বিচার বিভাগ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন—
“আমরা বিচার চাই। দয়া করে আর সময় নষ্ট করবেন না।”

See More>>>

Continue Reading
Advertisement
1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2017 Zox News Theme. Theme by MVP Themes, powered by WordPress.